সিলেটের জৈন্তাপুর উপজেলার ঘিলাতৈল এলাকা থেকে হরিপুর বাজারমুখী ১১ ট্রাক চোরাই চিনি ধরে গত ১৫ জুন কাস্টমস বিভাগে হস্তান্তর করেছিল বিজিবি। সিলেট-তামাবিল মহাসড়ক দিয়ে চোরাই চিনির বিরুদ্ধে সেটিই ছিল বিজিবির প্রথম অভিযান। ওই অভিযানের দিন ঘিলাতৈল গ্রামের বাসিন্দা নিজপাট ইউপি সদস্য ও ১নম্বর ওয়ার্ড শাখা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মনসুর আহমদ ওরফে মনসুর মেম্বারের কোনো খোঁজ পাওয়া যাচ্ছিল না।

 


ঈদুল আজহার দিনও এলাকাবাসী তার দেখা না পাওয়ায় তিনি কোথায়- এ নিয়ে এলাকায় চাঞ্চল্য ছড়িয়ে পড়ে। একটানা ১১ দিন অনুপস্থিতির পর বুধবার (২৬ জুন) বেলা একটার দিকে মনসুর মেম্বার তার ফেসবুক আইডিতে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে ছবিসংবলিত একটি স্ট্যাটাস দেন। 

 

তাতে তিনি লেখেন, ‘বিশেষ ক্ষমতা আইনের একটি মামলায় মহামান্য হাইকোর্ট থেকে আগাম জামিন নিলাম। মহামান্য হাইকোর্ট সন্তুষ্ট হয়ে দুই মাসের আগাম জামিন দিলেন... আলহামদুলিল্লাহ!’

 

এলাকাবাসী জানান, ফেসবুকে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলে আইনজীবীর সঙ্গে ছবিযুক্ত স্ট্যাটাস থেকে স্থানীয় লোকজনরা জানতে পেরেছেন যে, তিনি চোরাকারবারি। চোরাই চিনির বিরুদ্ধে চলমান ধরপাকড়ে একটানা ১১ দিন পলাতক থাকার কারণ ছিল জৈন্তাপুর থানায় বিজিবির অভিযানের দিন ১৫ জুন রাতে দায়ের করা একটি মামলা।

 

ফেসবুকে মনসুর মেম্বারের ছবি দেখে ও তার দেওয়া স্ট্যাটাসের বিষয়টি জানিয়ে নিজপাট ইউপির ১নম্বর ওয়ার্ডের কয়েকজন বাসিন্দা জানান, বিজিবির অভিযানের আগে স্থানীয় জনপ্রতিনিধি হিসেবে জৈন্তাপুর থানা পুলিশের সঙ্গে মনসুর মেম্বারকে দেখা যেত। পুলিশের সঙ্গে তার বিশেষ যোগাযোগের কারণে ঘিলাতৈল গ্রামে চোরাই চিনির কারবার ছড়িয়ে পড়েছিল। বিষয়টি পুলিশকে একাধিকবার জানিয়েও কোনো প্রতিকার পাননি এলাকাবাসী।

 

মনসুর মেম্বারের সঙ্গে তার শ্যালক আবদুল কাদির ও তার বড় ভাই আবদুল করিম ওরফে ‘ব্যান্ডিজ করিম’ জৈন্তাপুর থানার চোরাই চিনির ‘লাইন’ পরিচালনা করতেন বলে অভিযোগ রয়েছে। ফেসবুক স্ট্যাটাসে মনসুর মেম্বারের সঙ্গে শ্যালক আবদুল কাদিরের ছবিও দেখা গেছে। 

 

ঘিলাতৈল গ্রামের বাসিন্দারা জানান, তার আত্মগোপন নিয়ে নানা কথা ছড়িয়েছিল। তাকে পাওয়া গেলেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী গ্রেপ্তার করবে- এমন কথাও লোকমুখে ছিল। এসব কথার পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার এড়াতে মনসুর মেম্বার ফেসবুকে ছবি দিয়ে ‘আলহামদুলিল্লাহ’ বলেছেন। 

 

মনসুর মেম্বারের ব্যবহৃত ফোনে বুধবার বিকেলে তিনবার ফোন দিলেও তিনি রিসিভ করেননি। আধা ঘণ্টা পর তিনি ফোন করে জানান, তার বিরুদ্ধে একটি মিথ্যা মামলা হয়েছিল। সেটির জামিন নিয়েছেন তিনি। মিথ্যা মামলাটি কী ছিল? জানতে চাইলে তিনি সাংবাদিক পরিচয় জেনে ফোন কেটে দেন।

 

যোগাযোগ করলে জৈন্তাপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) তাজুল ইসলাম প্রথমে জানান, মনসুর মেম্বারের বিরুদ্ধে কোনো মামলা নেই। তাহলে হাইকোর্ট থেকে কোন মামলায় আগাম জামিন পেলেন তিনি? এ প্রশ্নে ওসি বলেন, ‘এ ব্যাপারে থানায় খোঁজ নিয়ে দেখতে হবে।’ 

 

আধা ঘণ্টা পর ওসি ফোন করে বলেন, ‘আমি ভুলে গিয়েছিলাম। ওই লোকের বিরুদ্ধে স্পেশাল অ্যাক্ট কেস আছে। একটি অভিযানে তার বাড়ি থেকে চোরাই চিনি উদ্ধারের পর পুলিশের দায়ের করা মামলার ১ নম্বর আসামি তিনি। এ মামলা থেকে হয়তো উচ্চ আদালত থেকে জামিন নিতে পারেন।’

 

মামলাটির নথিতে দেখা গেছে, ১৫ জুন রাত ১২টা ৪৫ মিনিটে মনসুর মেম্বারের বাড়ি থেকে ৬০ বস্তা চোরাই চিনি জব্দ করা হয়। এ ঘটনায় জৈন্তাপুর থানার এস আই নিখিলচন্দ্র দাস বাদী হয়ে ১৬ জুন বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা করেছেন। মামলায় ১ নম্বর আসামি মনসুর আহমদ (৩৬), ২ নম্বর আসামি আবদুল কাদির (৩৪)। এজাহারে আসামিদ্বয় ‘পলাতক’ বলে উল্লেখ করা হয়।

 

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম /খবরের কাগজ/ নাজাত