ইউরোপে আশ্রয়প্রার্থী আগমনের সম্মুখ সারিতে থাকা দেশগুলোর মধ্যে অন্যতম ভূমধ্যসাগরের তীরের দেশ ইটালি। অপরদিকে ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে পোল্যান্ডে আশ্রয় নিয়েছেন দেশটি থেকে আসা লাখো অভিবাসী। ইইউ পার্লামেন্ট নির্বাচনের পর নিজেদের শঙ্কা জানিয়েছেন অভিবাসন সংশ্লিষ্টরা।

 


 

ইটালি বরাবরই সমুদ্রপথে আসা অভিবাসীদের আগমন নিয়ে বছরজুড়ে আলোচনায় থাকে। অনিয়মিত অভিবাসীদের জন্য ইউরোপের অন্যতম প্রবেশদ্বার খ্যাত এই দেশটিতে ২০২৩ সালে আসা আশ্রয়প্রার্থীদের সংখ্যা ছিল এক লাখ ৩০ হাজারেও বেশি।

 

 

ইটালিতে এসে আন্তর্জাতিক সুরক্ষার আবেদন করতে অভিবাসীদের উত্তর আফ্রিকার দেশ লিবিয়া এবং ভূমধ্যসাগরের দীর্ঘ যাত্রা শেষ করতে হয়। যাদের মধ্যে অনেকের সলিল সমাধি হয় সেন্ট্রাল ভূমধ্যসাগরে অথবা ইটালি উপকূলে। 

 

ইটালিতে আসার পর আশ্রয় প্রক্রিয়ায় শুরুর আগে অভিবাসীদের দেশটির বিভিন্ন আশ্রয়কেন্দ্রে কিংবা অস্থায়ী কাঠামোতে কয়েক সপ্তাহ থেকে শুরু করে কয়েক মাস পর্যন্ত কোন প্রকার সমাধান ছাড়ায় অপেক্ষা করতে হয়। 

এমন পরিস্থিতিতে আশ্রয়প্রার্থীদের পাশে দাঁড়ানো অভিবাসন সংস্থাগুলো তাদের এই নাজুক পরিস্থিতি এবং অধিকার লঙ্ঘন নিয়ে শঙ্কিত। 

চলতি বছরের ১৪ মে ইউরোপীয় অভিবাসন এবং আশ্রয় প্যাক্ট-এর অনুমোদন দিয়েছে ইউরোপীয় কাউন্সিল। এটি পাস হওয়ার পর সংস্থাগুলোর উদ্বেগ আরও বেড়েছে।

কারণ ইটালির আশ্রয় বিষয়ক রাষ্ট্রীয় পরিষেবায় ইতিমধ্যে নাজুক পরস্থিতি বিরাজ করেছে। দেশটিতে হাজার হাজার আশ্রয় আবেদন যাচাইয়ের দায়িত্বে থাকা বেসামরিক কর্মচারীরা সম্প্রতি তাদের পেশার ক্রমবর্ধমান কঠিন কাজের পরিস্থিতি নিন্দা জানাতে ধর্মঘটে গিয়েছিলেন।

কিন্তু দেশটির অতি ডান প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সরকার এমন পরিস্থিতিতেও কর্মচারীদের উপর আশ্রয় আবেদন যাচাইয়ের প্রক্রিয়া দ্রুততর করতে চাপ দিয়ে যাচ্ছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। 

ইউক্রেনীয়দের ট্রানজিট দেশ পোল্যান্ড

ইটালির পর আমরা যদি ইউক্রেন সীমান্তে অর্থাৎ পোল্যান্ডের দিকে লক্ষ্য করি তাহলে দেখা যায় দেশটি অস্ত্র সরবরাহ এবং শরণার্থী সহায়তার ক্ষেত্রে ইউক্রেন যুদ্ধের অন্যতম স্থানে পরিণত হয়েছে।

ইউক্রেনের সাধারণ যাত্রীবাহী ফ্লাইটগুলো স্থগিত করা হলেও দেশটির হাসপাতালগুলোতে বর্তমানে সব চিকিৎসা পাও অসম্ভব। যুদ্ধে আহত এবং অসুস্থরা চিকিৎসার জন্য বিভিন্ন ইউরোপীয় দেশগুলোর হাসপাতালগুলোতে পৌঁছানোর আগে পোল্যান্ডের মধ্য দিয়ে ট্রানজিট করছে।

সম্প্রতি ইউক্রেন সীমান্তের নিকটবর্তী রেজেসজো শহরে গিয়েছিলেন রেড়িও ফ্রান্স ইন্টারন্যাশনালের সংবাদদাতা। মূলত এই অঞ্চল হয়ে গুরুতর আহত ব্যক্তিরা ভ্রমণ করে থাকেন।

ইউরোপে রাজনৈতিক অস্থিরতা

ইউরোপীয় পার্লামেন্টের নির্বাচনের পর এখন সবচেয়ে বেশি আলোচনা হচ্ছে ব্লকের রাজনৈতিক ভারসাম্য নিয়ে। সামনের বছরগুলোতে ইউরোপীয় রাজনীতির গতিপথ কোন দিকে যাবে সেটি নিয়েও আছে শঙ্কা।

ইউরোপীয় কমিশনের বিদায়ী প্রেসিডেন্ট জার্মান রাজনীতিবিদ উরসুলা ফন ডের লায়েন তার পদ আবারো নবায়নের বড় সম্ভাবনা রয়েছে। তার নিজ রাজনৈতিক বলয় এবং অন্যান্য গ্রুপের মধ্যে তাকে নিয়ে বিতর্ক থাকা সত্ত্বেও এবারো তিনি আগের পদে থাকবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে সামনের মেয়াদে ভালোভাবে দায়িত্ব পালন করতে তাকে তাকে নিজ জোটের বাইরে আরো নতুন রাজনৈতিক মিত্রের সন্ধান করতে হবে। তিনি বর্তমানে ইউরোপীয় সোশ্যাল ডেমোক্র্যাটদের দিকে ঘেঁষার চেষ্টা করছেন।

এছাড়া কট্টর ডান দলগুলোর মধ্যে ইটালির প্রধানমন্ত্রী জর্জা মেলোনির সাথে সম্পর্ক বৃদ্ধির চেষ্টা করছেন এই জার্মান রাজনীতিবিদ।

যার কারণে প্রশ্ন উঠেছে উরসুলা ফন ডের লায়েন আসলে রাজনৈতিকভাবে কোন ব্লকের রাজনীতি করছেন? তার কর্মসূচীগুলো আসলে ঠিক কোথায় অবস্থিত?

অভিবাসন, পররাষ্ট্র এবং নিরাপত্তাসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ বিষয় নিয়ে ইউরোপীয় শীর্ষ রাজনৈতিক দলগুলোর পাল্টাপাল্টি অবস্থান থাকায় এমন প্রশ্ন তুলেছেন সংশ্লিষ্টরা।

অপরদিকে, ব্রেক্সিটের মাধ্যমে ইইউ থেকে বেরিয়ে গেলেও যুক্তরাজ্যের নির্বাচন নিয়েও ইউরোপে আছে বড় আগ্রহ। কারণ অভিবাসন, ইউক্রেন যুদ্ধ এবং মধ্যপ্রাচ্যের সংকট নিয়ে বেশ কিছু বড় সিদ্ধান্ত ব্রিটেন এবং ইইউ একই নীতি অনুসরণ করে থাকে।

বিশেষ করে ইংলিশ চ্যানেল পাড়ি দিয়ে আসা অনিয়মিত অভিবাসন এবং রুয়ান্ডা নীতি নিয়ে বেশ চাপের মুখে আছেন বর্তমান প্রধানমন্ত্রী ঋষি সুনাক। রক্ষণশীলদের ১৪ বছরের শাসন শেষ করে জয়ের আশা করছে ব্রিটিশ লেবার পার্টি। ব্রিটিশ রাজনীতিতে দলটি অভিবাসীপন্থি হিসেবে পরিচিত। 

সিলেটভিউ২৪ডটকম/ইনফোমাইগ্রেন্টস/ এনএফ