মৌমিতা দাস। সিলেট মহানগরের খাসদবীর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা। সরকারি চাকরি থাকাকালীন অবস্থায় ছুটি নিয়ে পাড়ি জমান কানাডায়। কিন্তু এরই মধ্যে মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও বিদ্যালয়ে ফেরেননিতিনি। পরে জানা গেলে সংশ্লিষ্ট কর্র্তৃপক্ষের বিনা অনুমতিতেই তিনি বছরের পর বছর প্রবাসে বসবাস করছেন।
 

শুধু মৌমিতাই নন, সিলেটে কয়েক বছরে প্রাথমিকের শতশত শিক্ষক বিভিন্ন সময় বিদ্যালয় থেকে নৈমিত্তিক কিংবা চিকিৎসাজনিত ছুটি নিয়ে বছরের পর বছর বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। যাদের বেশিরভাগই কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, সুইজারল্যান্ডসহ বিশ্বের উন্নত দেশগুলোয় প্রবাসজীবন কাটাচ্ছেন বলে জানা গেছে। ইতোমধ্যেই অনেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা শুরু হয়েছে।
 


আর এভাবে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছুটি নিয়ে শিক্ষকরা প্রবাসজীবন কাটানোয় ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে শিশু শিক্ষার্থীরা। তাদের নিরবচ্ছিন্ন পাঠদানে ব্যাঘাত ঘটছে। শিক্ষকসংকটে শিক্ষার্থীরা দৈনন্দিন বিষয়ভিত্তিক পাঠগ্রহণ থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অন্যদিকে কয়েক ধাপের দাপ্তরিক প্রক্রিয়া অনুসরণের কারণ উল্লেখ করে প্রবাসে থাকা শিক্ষকদের পদ শূন্য ঘোষণা করতে সময় লাগানো হচ্ছে বছরের পর বছর। যে কারণে তাদের পদে অন্য শিক্ষকরা যোগদানও করতে পারছেন না। যদিও অভিযোগ রয়েছে, বছরের পর বছর কর্মস্থলে অনুপস্থিত থাকার পরও চাকরি যায় না মূলত কিছু কর্মকর্তার অসৎ সুযোগ-সুবিধা গ্রহণের ফলে।
 

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, সিলেট জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস থেকে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী, জেলায় সহকারী শিক্ষকের ৭ হাজার ৮৬৩টি পদের মধ্যে বর্তমানে কর্মরত রয়েছেন ৭ হাজার ১৯৫ জন। ১৪৭৭টি প্রধান শিক্ষকের পদের বিপরীতে বর্তমানে কর্মরত ১ হাজার ১০৯ জন।
 

সিলেট জেলায় ইতিমধ্যে ৪৫টি বিভাগীয় মামলায় ৪০ জন শিক্ষককে বরখাস্ত করা হয়েছে। ২১ জনের বিরুদ্ধে মামলা এখনো চলমান রয়েছে। যাদের অধিকাংশ মিথ্যা তথ্যে ছুটি নিয়ে বিদ্যালয় ত্যাগ করেছিলেন।
 

বিনা অনুমতিতে দেশ ত্যাগ করার সংখ্যায় পিছিয়ে নেই মৌলভীবাজারের শিক্ষকরা। এ জেলার বিভিন্ন উপজেলা থেকে মিথ্যা তথ্য দিয়ে ছুটি নিয়ে কানাডা, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিভিন্ন দেশে বসবাস করায় ২৩ জন শিক্ষকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা চলমান। এরই মধ্যে যাদের ১১ জনকে চাকরি থেকে বরখাস্ত করা হয়েছে।
 

এ প্রসঙ্গে সিলেটের জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সাখাওয়াত এরশেদ বলেন, এ জেলার লোকজনের মধ্যে বিদেশে থাকার সংখ্যা উল্লেখযোগ্য। বর্তমানে কিছু মামলা ঝুলে আছে। অনেকগুলো ধাপ পেরিয়ে একজন শিক্ষককে স্থায়ীভাবে চাকরিচ্যুত করা হয়। শিক্ষকদের অনুপস্থিতির কারণে শিক্ষার্থীদের সমস্যা হয়, তবে বিদ্যালয়ের অন্য শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের পাঠদান নিরবচ্ছিন্ন রাখার চেষ্টা করেন।


 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি /এসডি-৫৫৪৬