ভারতে লোকসভার প্রথম অধিবেশনের প্রথম দিনেই নরেন্দ্র মোদি সরকারের সঙ্গে বিরোধীদের সংঘাত শুরু হয়ে গেছে। মূলত দুইটি বিষয় নিয়ে সংঘাত শুরু হয়েছে। যার প্রথমটি- প্রোটেম স্পিকার নিয়ে।

সোমবার বিজেপি সংসদ সদস্য ভর্তৃহরি মহাতবকে প্রোটেম স্পিকার হিসাবে শপথবাক্য পাঠ করান প্রেসিডেন্ট দ্রৌপদী মুর্মু। প্রোটেম স্পিকারের কাজ হলো, নতুন স্পিকার নির্বাচিত হওয়া পর্যন্ত লোকসভার কাজ সামলানো ও সংসদ সদস্যদের শপথবাক্য পাঠ করানো। প্রথম দিনে ২৮০ জন সংসদ সদস্যের শপথ নেওয়ার কথা।


রীতি হলো, লোকসভার সবচেয়ে প্রবীণ সংসদ সদস্য প্রোটেম স্পিকার হন। কে সবচেয়ে প্রবীণ তা ঠিক হয়, তিনি কতবার লোকসভায় জিতে এসেছেন তার ওপর। মহাতব লোকসভায় সাতবার জিতে আসা সংসদ সদস্য।

কংগ্রেসের বক্তব্য, তাদের সংসদ সদস্য সুরেশ আটবার লোকসভায় জিতে এসেছেন। তাই তাকে প্রোটেম স্পিকার করা উচিত ছিল। প্রতিবাদে তারা ঠিক করেছে, সরকার ও প্রোটেম স্পিকার লোকসভা পরিচালনার যে প্যানেল তৈরি করেছে, তাতে কংগ্রেসের কেউ থাকবেন না।

সংসদীয়মন্ত্রী কিরণ রিজিজুর বক্তব্য, মহাতব পরপর সাতবার জিতে এসেছেন, সুরেশের এই রেকর্ড নেই। তাই তাকে প্রোটেম স্পিকার করা হয়েছে।

পরীক্ষার প্রশ্ন ফাঁস নিয়ে
কংগ্রেস-সহ বিরোধীরা ঠিক করেছে, প্রথম অধিবেশনেই তারা সরকারকে প্রশ্ন ফাঁস কেলেঙ্কারি নিয়ে কোণঠাসা করতে চায়। বিরোধীরা দুইটি প্রধান প্রশ্ন করতে চায়। এই প্রশ্ন ফাঁস হলো, তার দায় সরকার কেন নেবে না? দ্বিতীয়ত, নেট পরীক্ষা বাতিল করা হলো, কিন্তু নিট কেন বাতিল করা হলো না? সারা দেশজুড়ে পরীক্ষার্থীরা দাবি করার পরেও কেন তা বাতিল করা হচ্ছে না?

গত শনিবার সরকার ন্যাশনাল টেস্টিং এজেন্সির ডিজি সুবোধ সিং-কে পদ থেকে সরিয়ে দিয়েছে। সাত সদস্যের প্যানেল তৈরি করেছে, যারা এই সংস্থার কাজকর্ম খতিয়ে দেখবে। পরীক্ষা সংস্কার নিয়ে সুপারিশ করবে।

কিন্তু বিরোধীদের দাবি, এটা যথেষ্ট নয়। মানব সম্পদ উন্নয়নমন্ত্রী ধর্মেন্দ্র প্রধানের পদত্যাগের দাবিতে কংগ্রেস দেশজুড়ে বিক্ষোভ করেছে। রাহুল গান্ধী বলেছেন, তারা সংসদে প্রশ্নফাঁসের বিষয়টি তুলবেন এবং সরকারকে উপযুক্ত ব্যবস্থা নিতে বাধ্য করবেন।

বিরোধীরা ঐক্য দেখানোর জন্য ঠিক করেছেন, ইনডিয়ার শরিক দলের সব সংসদ সদস্য একসঙ্গে লোকসভায় ঢুকবেন। তার আগে বিরোধী সংসদ সদস্যরা সংসদ ভবনের সামনে সংবিধান হাতে করে বিক্ষোভ দেখিয়েছেন। দাবি করেছেন, সংবিধানকে রক্ষা করতে হবে।

দেশ চালাতে মতৈক্য চান মোদি
সংসদ ভবনের বাইরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘দেশ চালাতে গিয়ে মতৈক্য দরকার। তাই আমি নিরন্তর চেষ্টা করব সকলকে সঙ্গে নিয়ে দেশের সেবা করতে। আমি সবার আশা-আকাঙ্খাকে পূর্ণ করব। আমি সবাইকে সঙ্গে নিয়ে চলতে চাই।’

১৮তম লোকসভার প্রথম দিনের প্রথম অধিবেশনের আগে মোদির এই কথা তাৎপূর্যপূর্ণ। কারণ, এবার বিজেপি সংখ্যাগরিষ্ঠতা পায়নি। তাদের এনডিএ-র শরিক দলের ওপর সংখ্যাগরিষ্ঠতার জন্য নির্ভর করতে হবে। তাই মোদি লোকসভা শুরুর প্রথম দিনেই মতৈক্যের কথা বললেন।

তবে মোদি বলেছেন, জরুরি অবস্থার পঞ্চাশ বছর হতে চলেছে। তা কেউ ভুলবে না। সেসময় সংবিধানকে শেষ করা হয়েছিল, দেশকে জেলখানা বানানো হয়েছিল, গণতন্ত্রকে হত্যা করা হয়েছিল। গণতন্ত্র ও সংবিধানকে বাঁচাতে দেশবাসী শপথ নেবেন, আর কাউকে ভবিষ্যতে এই কাজ করতে দেওয়া হবে না।

মোদি আরও বলেছেন, ‘মানুষ সংসদে গোলমাল চায় না। ভালো বিরোধী চায়। দায়িত্বশীল বিরোধী চায়। আশা করব, বিরোধীরা এই আশা পূর্ণ করবে।’

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম/ডেস্ক/এসডি-৫৫০৪