ছবি : সিলেটভিউ

২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যার পর চলতি বছর গত এক মাসে দুইবার ডুবেছে সিলেট। প্রথম দফায় ২৭ মে সিলেট সিটিসহ ১২ উপজেলায় সাড়ে সাত লাখ মানুষ পানিবন্দি হন। আর দ্বিতীয় দফায় ১৫ জুন নগরীসহ পুরো জেলা আক্রান্ত হয় বন্যায়। বর্তমানে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় সীমাহীন দুর্ভোগ পুহাচ্ছেন। কিন্তু কোটি কোটি টাকা ব্যয়ের প্রকল্পে কেন সুফল এলো না তা নিয়ে এখন প্রশ্ন উঠেছে। শুধু সিলেট শহরেই প্রায় ১ হাজার ১ শ  ৩৮ কোটি টাকা বিভিন্ন প্রকল্পে ব্যয় হয়েছে। তবুও বন্যা ও জলাবদ্ধতা থেকে রেহাই পেলে না সিলেট নগরী।

 


সচেতন মহল বলছে- নদী ও ছড়া পরিকল্পিতভাবে গভীর করা হলে সিলেট শহর ও নদী তীরবর্তী এলাকাগুলোতে বন্যা পরিস্থিতি এতো ভয়াবহ হতো না। বর্তমানে নদী, ছড়া ও খালে যথাযথ খননের অভাবে পানির ধারণক্ষমতা হারিয়েছে।

 

সিটি করপোরেশনের প্রকৌশল শাখা জানিয়েছে, ২০০৯ সালের পর থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত ছড়া খনন, ছড়ার পারে অবৈধ স্থাপনা উচ্ছেদ করে রিটেনিং ওয়াল নির্মাণ, ইউটাইপ ড্রেন ও ওয়াকওয়ে নির্মাণ, নালানর্দমা প্রশস্তকরণসহ জলাবদ্ধতা নিরসন-সংক্রান্ত বিভিন্ন প্রকল্পে ১ হাজার ৭৮ কোটি টাকা ব্যয় করেছে সিটি করপোরেশন। চলতি বছর একই খাতে সাড়ে ৫ কোটি টাকা খরচ হয়েছে। এ ছাড়া বিভিন্ন ওয়ার্ডে আরও প্রায় ৫৫ কোটি টাকার কাজ চলছে।

 

সিটি করপোরেশনের প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুর রহমান বলেন, আমরা সুরমা নদী পানিতে কানায় কানায় পরিপূর্ণ থাকায় নগর দিয়ে প্রবাহিত ছড়া ও খালের পানি নামতে পারছে না।

 

এদিকে সিলেট জেলা প্রশাসন জানিয়েছে, এ সময় (রোববার ২৩ জুন, দুপুর) পর্যন্ত  সিলেটে ৮ লাখ ৫২ হাজার ৩৫৭ জন বন্যা কবলিত। এর মধ্যে মহানগরে ১৫ হাজার। বর্তমানে মহানগরের ৮টি ওয়ার্ড জেলার ১০৭টি ইউনিয়নে বন্যার পানি রয়েছে।

 

সিলেটে বর্তমানে আশ্রয়কেন্দ্রে আছেন ১৯ হাজার ৭৩৮জন। এসব আশ্রয়কেন্দ্রে সরকারি-বেসরকারিভাবে ত্রাণ বিতরণ অব্যাহত আছে। পৌঁছানো হচ্ছে বিশুদ্ধ পানি ও ওষুধপত্র।

 

তিন দিন ধরে বৃষ্টিপাত না হওয়ায়  সিলেট মহানগরেরও বিভিন্ন এলাকা থেকে পানি নামছে। তবে অনেক নিচু এলাকার সড়ক ও বাসাবাড়ি থেকে পুরোপুরি পানি নামেনি এখনো। অন্যদিকে জেলার বিভিন্ন উপজেলায় লোকালয় থেকে পানি কমে যাওয়ায় আশ্রয়কেন্দ্র থেকে বসতবাড়িতে ফিরছেন বাসিন্দারা। তবে যারা বাড়ি ফিরেছেন তারা পোহাচ্ছেন নানা ভোগান্তি।

 

সিলেট নগরী ও বিভিন্ন উপজেলায় বন্যার পানি ধীর গতিতে নামছে। এখন পর্যন্ত  সিলেটে সাড়ে ৮ লাখ মানুষ পানিবন্দী। এছাড়া এখনো বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছে  সিলেটের দুটি নদীর পানি ৪ পয়েন্টে। বন্যা কবলিত এলাকাগুলোতে পর্যাপ্ত ত্রাণের সংকট রয়েছে বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগিরা। একই সাথে বন্যার পানিতে তলিয়ে রয়েছে নলকূপ। ফলে আশ্রয়কেন্দ্রসহ বন্যা কবলিত এলাকায় রয়েছে বিশুদ্ধ পানির অভাব।

 

তবে জেলা প্রশাসনের পক্ষে বন্যা কবলিত এলাকায় ত্রাণ তৎপরতা চলছে। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, সরকার পর্যাপ্ত বরাদ্দ দিচ্ছে। তবে বানভাসীদের দাবি যা দেয়া হচ্ছে-তা চাহিদার তুলনায় কম।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি