ছবি : সিলেটভিউ

আগামী কাল সোমবার পবিত্র ঈদুল আজহা। ত্যাগের মহিমা নিয়ে ঈদ উদযাপন করবে সারাদেশের মানুষ। কিন্তু সিলেটে ইতোমধ্যেই বন্যা পরিস্থিতি তৈরী হয়েছে। হুহু করে বাড়ছে নদ-নদীর পানি। পানিবন্দি হয়ে পড়েছেন লক্ষাধিক মানুষ। জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৯টিতে বন্যা দেখা দিয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশী ভয়াবহ গোয়াইনঘাট উপজেলা। জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযাযী জেলাজুড়ে ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৮ জন বন্যাকবলিত হয়েছেন।  আশ্রয়কেন্দ্রে ওঠেছেন বন্যাকবলিত মানুষজন। তাই ফিকে হয়ে যাচ্ছে বানভাসি মানুষের ঈদ।

 


বৃষ্টিপাত ও ভারতের মেঘালয় ও আসামের পাহাড়ী এলাকায় টানা ভারি বৃষ্টিপাত হয়। ফলে সীমান্তের ওপার থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে সিলেটের সীমান্ত উপজেলাগুলোতে বন্যা দেখা দেয়। ইতোমধ্যেই সুরমা, কুশিয়ারা, সারি, লোভা, ধলাই ও পিয়াইন নদীর পানি বেড়ে চলছে। কিছু কিছু স্থানে পানি বিপদসীমা অতিক্রম করেছে।

 

জেলা প্রশাসনের হিসেব অনুযায়ী আজ রোববার (১৬ জুন) দুপুর পর্যন্ত সিলেটের ৯ উপজেলার ১ লাখ ৭৯ হাজার ১৮ জন বন্যাকবলিত হয়েছেন। এরমধ্যে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত গোয়াইনঘাট উপজেলায়। এই উপজেলার ১৩ ইউনিয়নের ১ লাখ ১৪ হাজার ৬০০ জন।

 

এখন পর্যন্ত জেলার ১৩টি উপজেলার মধ্যে ৯টি বন্যাকবলিত হলেও সবকটি উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র প্রস্তুত রাখা হয়েছে। জেলার ১৩টি উপজেলায় মোট ৫৩৭টি আশ্রয়কেন্দ্র খুলেছে জেলা প্রশাসন। আশ্রয় নিয়েছেন ৫৩ জন।

 

বন্যা পরিস্থিতি বিবেচনায় আশ্রয়কেন্দ্রের সংখ্যা হ্রাস বৃদ্ধি করা হবে বলে জানিয়েছেন সিলেটের জেলা প্রশাসক শেখ রাসেল হাসান।

 

এদিকে বন্যার পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় সিলেট জেলা সদরের সাথে যোগাযোগ রক্ষাকারী সালুটিকর-গোয়াইনঘাট রাস্তা বিচ্ছিন্ন রয়েছে। উপজেলার গোয়াইনঘাট -সারিঘাট ও সালুটিকর-গোয়াইনঘাট  সড়কের উপর দিয়ে একাধিক স্থানে বন্যার পানি প্রবাহিত হচ্ছে। উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নের, ৩১৩টি গ্রামের মধ্যে ১৪৬টি গ্রাম প্লাবিত রয়েছে।

 

সিলেটের মধ্য দিয়ে বয়ে চলা নদ নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে।পানি উন্নয়ন বোর্ড   সিলেট কার্যালয়ের তথ্য মতে,  সিলেট জেলার পাঁচ পয়েন্টে নদীর পানি বিদৎসীমার নিচে থাকলেও অবিরত বাড়ছে পানি। আজ রোববার (১৬ জুন) দুপুর ১২ টার তথ্য অনুযায়ী, সুরমা নদীর কানাইঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার নিচ ১৩. ৭১ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

কুশিয়ারা নদীর অমলসিদ পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার নিচে ১৪.৯৮ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। কুশিয়ারা নদীর শেওলা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার নিচে ১১.১৩ সেন্টিমিটার প্রবাহিত হচ্ছে। সারি নদীর সারিঘাট পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ৮৩ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।  সারিগোয়াইন নদীর গোয়াইনঘটা পয়েন্টের পানি বিপৎসীমার ১২.৬২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

 

পানি উন্নয়ন বোর্ড জানিয়েছে, নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। বেশ কয়েকটি পয়েন্টে নদীর পানি ইতিমধ্যে বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হতে শুরু করেছে। এদিকে  সিলেট গত ২৪ ঘন্টায় (সকাল ৬টা থেকে ৬টা পর্যন্ত)  সিলেট আবহাওয়া অফিস ৬৬. ৫ মিলি মিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে।

 

গত ২৭ মে থেকে সিলেটে আগাম বন্যা দেখা দেয়। দুই সপ্তাহ ব্যাপী চলমান এ বন্যায় আক্রান্ত হন সিলেট সিটিসহ ১২টি উপজেলার সাড়ে ৭ লাখ মানুষ। সেই বন্যার পানি পুরোপুরি নেমে যাওয়ার আগেই সিলেটে আবার দেখা দিলো বন্যা।

 

সিলেটভিউ২৪ডটকম / মাহি