সুনামগঞ্জ জেলার শান্তিগঞ্জে হাওরবেষ্টিত এলাকায় জ্বর, নিউমোনিয়া, ডায়রিয়া, অ্যাজমা ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত শিশুর সংখ্যা আশঙ্কাজনক হারে বেড়েছে। প্রতিদিন রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে শান্তিগঞ্জ উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

 


আক্রান্ত শিশুদের অধিকাংশের অবস্থা গুরুতর হওয়ায় অন্যত্র ভর্তির পরামর্শ দিচ্ছেন ডাক্তাররা। তবে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় মেডিকেল অফিসার দিয়েই চলছে চিকিৎসা সেবা। স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় অধিকাংশ অভিভাবক শিশুকে নিয়ে ছুটছেন ৫০ কিলোমিটার দূরে সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজে হাসপাতাল সিলেটে এবং ১৫ কিলোমিটার দুরে ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেলা সদর হাসপাতালে সুনামগঞ্জে। ফলে চরম ভোগান্তির শিকার হতে হচ্ছে জরুরি ভিত্তিতে চিকিৎসা নেয়া রোগী ও অভিভাবকদের।

 

 

নয় মাসের শিশুকে ডায়রিয়া জনিত কারণে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করিয়েছিলেন  উপজেলার বাসিন্দা আসলাম উদ্দিন। তিনি বলেন, দুইদিন ভর্তি থেকে শিশুর কোন উন্নতির লক্ষণ দেখতে না পাওয়ায় এবং হাসপাতালে কোন শিশু বিশেষজ্ঞ ডাক্তার নাই বিধায় ভালো চিকিৎসার জন্য শিশুকে নিয়ে  সুনামগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি হই। একটু পেরেশানি হলেও আলহামদুলিল্লাহ আমার মেয়ে এখন সুস্থ আছে।

 

শান্তিগঞ্জ উপজেলার জয়কলস ইউনিয়নের জামলাবাজ গ্রামের ফাতেমা বেগম তার জমজ দুই সন্তান ঠান্ডাজনিত জ্বর সর্দিকাশি নিয়ে ৪ দিন ধরে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি ছিলেন। তার বাচ্চার শারীরিক অবস্থা আগের থেকে উন্নতি হয়েছে তবে এখানে কোনো শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় চরম ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে তাকে।

 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা গেছে, এখানে গাইনি, শিশু, অ্যানেসথেসিয়া, সার্জারি, মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ও ডেন্টাল সার্জনসহ সকল বিশেষজ্ঞ  পদই শূন্য রয়েছে। হাসপাতালে ১৮ জন ডাক্তার থাকার কথা থাকলেও এখানে আছেন মাত্র ৫ জন ডাক্তার। তারমধ্যে একজন ফাউন্ডেশন ট্রেনিংয়ে। অপর একজন চিকিৎসক মাতৃত্বকালীন ছুটিতে যাবেন অচিরেই। নার্স ২০ জনের স্থানে আছেন ৫ জন। আয়ার ৪ টি পদ রয়েছে শূন্য। কোনো পরিচ্ছন্নতাকর্মীও নেই। নিরাপত্তা প্রহরীও নেই।


উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে আরও জানা গেছে, অ্যানেসথেসিয়া ও গাইনি বিশেষজ্ঞ না থাকায় প্রসূতিদের চিকিৎসার ব্যবস্থা নেই। তাই প্রসূতিদের অতিরিক্ত টাকা খরচ করে সিলেট অথবা সুনামগঞ্জের সদর হাসপাতালে যেতে হয়। তাছাড়া হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা পুরোদমে চালু হলেও রোগীর রোগ নির্ণয় বা পরীক্ষার জন্য এখানে কোন যন্ত্রপাতির ব্যবস্থাও নেই।

 

 

শনিবার(১১ মে )  দুপুর ১২টার দিকে সরেজমিনে দেখা গেছে, বহির্বিভাগে চিকিৎসা কর্মকর্তা ভারপ্রাপ্ত আরএমও ডাঃ তারিক জামিল অপু তাঁর চেম্বারে রোগী দেখছেন। সেখানে রোগীদের ভিড় ও লম্বা লাইন। তিনি জানান প্রতিদিন গড়ে তাদের দুইশো পঞ্চাশ  থেকে তিনশো জন রোগী দেখতে হয়।

 

স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সিনিয়র স্টাফ নার্স লিজা আক্তার  জানান, ৫০  শয্যার এ হাসপাতালে আমরা আপাতত ২০ শয্যায় চিকিৎসা সেবা শুরু করেছি এখানে প্রতিদিন ৬ থেকে ৭ জন রোগী ভর্তি থাকে। বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা তাদের স্থায়ী ক্যাম্পাসে চলে গেলে আর পর্যাপ্ত ডাক্তার পেলে তখন আর সমস্যা থাকবে না।

 

উপজেলা পরিবার ও পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. ইকবাল হাসান বলেন, শিশু বিশেষজ্ঞ না থাকায় আমরা মেডিকেল অফিসার দিয়ে শিশুদের সেবা দিচ্ছি। যদিও হাসপাতালে পর্যাপ্ত মেডিকেল অফিসার নেই। তবে শিশুদের জটিল কোনো সমস্যা হলে সিলেট কিংবা সুনামগঞ্জে চিকিৎসা নেয়ার পরামর্শ দেয়া হয়। সে ক্ষেত্রে অভিভাবকদের ভোগান্তিতে পড়তে হয়। তাছাড়া পর্যাপ্ত জনবল সংকট ও পাশাপাশি বঙ্গবন্ধু মেডিকেল কলেজের ছাত্র/ছাত্রীদের দখলে এখনো কিছু কক্ষ থাকার কারনে স্বাস্থ্য সেবা তো একটু ব্যহত হচ্ছেই।  তবে আমি আমার ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলেছি বিশেষ করে এখানে শিশু ও গাইনী বিশেষজ্ঞ দেয়ার জন্য। তারাও চেষ্টা করছেন। ল্যাব সেবা চালু করার জন্য সব যন্ত্রপাতির জন্য চাহিদা দেওয়া হয়েছে। তবে বর্তমানে আমাদের হাসপাতালে ওষুধের ঘাটতি রয়েছে।

 


সিলেটভিউ২৪ডটকম / ডি.আর